আজকের ব্লগ পোস্টটি আমরা জমির সাথে অন্যান্য বিনিয়োগের বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ তুলনা করে দেখবো যে, জমিতে বিনিয়োগই কেন লাভজনক, ঝুঁকিহীন ও উত্তম বিনোয়োগ।
বাংলাদেশ তথা পৃথিবীতে মাটির বা জমির যোগান সীমিত বরং জমির যোগান দিন দিন কমে যাচ্ছে। আর এইদিকে জমির চাহিদা আকাশছোঁয়া হচ্ছে। জমি একটি প্রাকৃতিক সম্পদ যা কখনোই মূল্যহীন হবে না। অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে জমির দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকে। জমিতে বিনিয়োগ সবচেয়ে কম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, কারণ এটি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা একবারে নেই বললে চলে। জমি একটি টেকসই সম্পদ যা মুদ্রাস্ফীতি বা অর্থনৈতিক সংকটের বিরুদ্ধে আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করে। এছাড়া জমি একটি সুনির্দিষ্ট এবং দৃশ্যমান সম্পত্তি, যা এর মালিককে একটি আর্থিক নিরাপত্তার অনুভূতি প্রদান করে। এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও উপকারি হয়। একটুকরা জমি মানুষকে দীর্ঘমেয়াদী মানসিক শান্তি প্রদান করে। কারণ এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যতের সম্বল। ভবিষ্যতের অনাকাঙ্ক্ষিত আশঙ্কা কাটাতে আপনাকে একটি জমি সব রকম সাহায্য করবে। এজন্য অন্যান্য বিনিয়োগ থেকে জমি বিনিয়োগই হবে সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ।

জমি বিনিয়োগ করে যে আর্থিক লাভবান হয় তা নয় কিন্তু একটুকরা জমি আপনার ও আপনার পরিবারের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করবে। একটি জমি থাকলে তাতে আপনি অনেক কিছু করতে পারবেন। যেমন: জমিতে কৃষিজ পণ্য উৎপাদন, বাণিজ্যিক পণ্য, বাড়ি সহ আরও কত কী। একটি খালি জমির দামও বৃদ্ধি পায় খুব তাড়াতাড়ি। আবার যদি আপনার জমির পাশে কোন প্রকল্প যায় তাহলে জমির দাম এক রাতে অনেক বেড়ে যাবে। একটি জমি থাকলে কেমন লাভ হবে তা লিখে শেষ করা যাবে না।
ব্যাংকে অর্থ বিনিয়োগ (সঞ্চয়পত্র) নাকি জমি ক্রয়, কোনটি লাভজনক হবে?

- মুদ্রাস্ফীতি: ব্যাংক থেকে যে সুদের হার দেয় তার থেকেও বেশি মুদ্রাস্ফীতির হার বেশি হয়ে থাকে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে আলোচনা করলে ব্লগ পোস্টটি অনেক বড় হয়ে যাবে। তবে সংক্ষেপে বলা যায় যে, মুদ্রাস্ফীতির কারণে আপনার টাকার প্রকৃত মান কমে যায়। যেমন: এখন ১কেজি মুরগির মাংস ১৭০টাকা পাওয়ার গেলেও আগামী ৫-৭বছর পর তা বেড়ে ২৫০টাকা হবে।
- ব্যাংক দেউলিয়া: বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক দুর্বল অবকাঠামোর কারণে আমাদের ব্যাংকগুলো খুব সহজে দেউলিয়া হয়ে যায়। তাই ব্যাংকে টাকা জমা রাখা খুবই অনিরাপদ।
- দ্রুত নগদ অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা: ব্যাংকের ভালো দিক হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়পত্র ছাড়া সকল সঞ্চয়ে খুব দ্রুত টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেয়। যা আমাদের নিত্য ও জরুরি প্রয়োজনে দরকার হয়ে থাকে।
আমাদের অদূর ভবিষ্যতে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতেও পারে তার জন্য কিছু নগদ অর্থ হাতে রাখতেই হবে। অব্যশই জরুরী প্রয়োজনের জন্য কিছু নগদ অর্থ হাতে/ব্যাংকে রাখা আবশ্যক হয়ে যায়। কারণ জায়গা জমি ক্রয়-বিক্রয় একটি জটিল বিষয়। তাই এর থেকে সহজে নগদ অর্থ পাওয়া যায় না। তবে হাতে/ব্যাংকে তরল অর্থ রাখার সময় একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যাতে বেশি পরিমাণ তরল অর্থ হাতে/ব্যাংকে না থাকে, বেশি পরিমাণ তরল অর্থ থাকার ফলে আমরা অন্য দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে, যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা অন্যান্য লভ্যংশ থেকে বঞ্চিত থাকবো। এজন্য খুব হিসাব-নিকাশ করে একটি নির্দিষ্ট অংশ তরল সম্পদে রেখে বাকি সকল অর্থ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের চিন্তা করতে হবে। অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের কথা চিন্তা আসলে আমাদের জমি কেনার কথায় সবার চেয়ে বেশি মাথায় আসে এবং এটি নিরাপদ বিনিয়োগও বটে।
শেয়ার বাজার না জমি, কোনটি লাভজনক হবে?
জায়গা-জমি কিনা থেকে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেও অনেক লাভবান হওয়া যায়। শেয়ার বাজার উচ্চ ঝুঁকির বাজার, শেয়ার বাজারের জ্ঞান না থাকলে শেয়ার বাজারে সব অর্থ হারানোর ভয় সবসময় থাকে। অন্য দিকে জায়গা-জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে তেমন ধারণার/জ্ঞানের দরকার হয়। আপনি একটি জমি কিনে রেখে দিলে ধীরে ধীরে এর মূল্য বৃদ্ধি পাবে। শেয়ারের মূল্য ঊঠা-নামা করলে জমি মূল্য কখনো নিম্নমুখী হয় না। তাই নিশ্চিন্ত/সেইফ/দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করলে জমি ক্রয়ের বিকল্প নাই।
গোল্ড না জমি, কোনটি লাভজনক হবে?

নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মানুষের অন্যতম পছন্দ গোল্ড থাকে। তবে গোল্ড কিনে রাখার আগে কিছু বিবেচ্য বিষয় মাথায় রাখা দরকার। যেমন:
- চুরি হওয়ার সংশয়: ঘরে গোল্ড রাখলে চুরি/ডাকাতির ভয় সবসময় থাকে। অন্যদিকে ব্যাংকের লকারে রাখলেও চার্জ দিতে হবে। আবার বাংলাদেশের ব্যাংক গুলোতে লকার থেকে অনেক সময় চুরির অভিযোগও পাওয়া গেছে।
- নগদের অর্থের অনিশ্চয়তা: জমিতে যেমন খুব সহজে নগদ অর্থ পাওয়া যায় না। একইভাবে গোল্ড থেকে নগদ অর্থে কনভার্ট করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।
- ইসলামি যাকাত: ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক গোল্ডের উপর প্রতিবছর ২.৫% হারে যাকাত প্রদান করতেই হবে। যদি গোল্ড কিনার পর আপনি যাকাত প্রদান না করেন তাহলে আপনার এই বিনিয়োগটি হারাম হবে। জমির যাকাতের মাসলা সম্পর্কে এই ব্লগ পোস্টটির শেষে আলোচনা করা হয়েছে।
তাই এই সব বিবেচনায় গোল্ড থেকেও জমি কিনা উত্তম।
বৈদেশিক মুদ্রা না জমি, কোনটি লাভজনক হবে?

বৈদেশিক মুদ্রাতেও মুদ্রাস্ফীতি ভয় থাকে। তবে ইউরোপের বিভিন্ন মুদ্রাতে(ডলার, ইউরো সহ অন্যান্য) মুদ্রাস্ফীতি হলেও তা বাংলাদেশের মুদ্রার সামঞ্জস্যতায় অনেক এগিয়ে থাকে। বৈদেশিক মুদ্রা কত টাকা হাতে রাখবেন এই নিয়ে আইনের মারপ্যাচ রয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রাতেও অনেক ঝুঁকি রয়েছে। যেমন: চুরি হওয়ার সংশয়, সহজে নগদ অর্থে রূপান্তরের অনিশ্চয়তা, ভালো দামে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করতে না পারা সহ আর অনেক ঝুঁকি। তাই এই সব বিবেচনায় বৈদেশিক মুদ্রা থেকে জমি কিনায় উত্তম।
জমিতে বিনিয়োগের ঝুঁকি:

জমিতে বিনিয়োগ করা লাভজনক হলেও এর বেশ কিছু ঝুঁকির দিকও রয়েছে। ঝুঁকি বলা ঠিক হবে না তবে জমি ক্রয়ের আগে নিচের বিষয় গুলো অব্যশই মাথায় রাখতে হবে:
- দ্রুত নগদ অর্থ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা: জমি বিক্রি করা জটিল বিষয় হাওয়ায় আপনার জরুরী প্রয়োজনে জমি বিক্রি করে নগদ অর্থ পাওয়া যায় না। তবে কীভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন তা উপরে ব্যাংক বিনিয়োগের মাঝে আলোচনা করা হয়েছে।
- জমি ক্রয়ে প্রতারণা: জমি ক্রয় অনেক জটিল বিষয় হাওয়ায় এখানে অনেক প্রতারক বিভিন্ন সুযোগ নেওয়ার জন্য তারা সবসময় বসে থাকে। এজন্য জমি ক্রয়ের আগে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি সাথে আলোচনা করুন।
- জমি ক্রয় বিক্রয়ে সকল বিষয়ে আপনাকে সাহায্য করবে জমি বাজারের অভিজ্ঞ টিম।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ: একমাত্র কিয়ামত ছাড়া আপনার জমি কখনো ধ্বংস হবে। তবে নদীর পাশে জমি ক্রয় থেকে বিরত থাকুন, নদী ভাঙ্গনে আপনার জমি নদীতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।
- সরকারি প্রকল্প: ভবিষ্যতে সরকারি প্রকল্প যেতে পারে এমন সম্ভাব্য স্থান সমূহতে জায়গা-জমি ক্রয় থেকে বিরত থাকুন। তবে সরকার আপনার জমি নিলেও জমির প্রকৃত দাম থেকে কয়েক গুণ বেশি ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে।
জমিতে বিনিয়োগের আরও কিছু ঝুঁকি আছে, যেমন জমির আইনগত সমস্যা, বা স্থানীয় প্রশাসনিক বাধা। তাই বিনিয়োগের পূর্বে ভালোভাবে গবেষণা করা এবং উপযুক্ত পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য বিনিয়োগের যত ঝুঁকি রয়েছে তার সামনে জমির এই ঝুঁকি গুলা খুবই সামান্য। তাই দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ সুযোগ থাকলে অব্যশই জমিতে বিনিয়োগ করুন।
এক কথায় অন্যান্য বিনিয়োগের তুলনায় জমিতে বিনিয়োগ কম ঝুঁকিপূর্ণ
গোল্ড, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার বাজার, ইত্যাদিতে বিনিয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, এই ধরনের সম্পত্তির দাম প্রায় ওঠা-নামা করতে থাকে। বলতে গেলে জমির দাম কখনো নিম্নমুখী হয় না সবসময় উর্ধ্বমুখী থাকে। তাই যারা লাভবান, নিরাপদ ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য নিঃসন্দেহে সেরা বিনিয়োগের অপশন হচ্ছে জমি ক্রয় করা।
ইসলামের দৃষ্টিতে জমি বিনোয়োগ হালাল না হারাম?
অব্যশই হালাল। তবে কিছু বিষয়ে মাথায় রাখতে হবে। জমির যাকাত ও খাজনা নিয়মিত প্রদান করতে হবে। নিচে জমির যাকাত নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। আপনার জমির ধারা যাতে কোন মানুষের কষ্ট না হয় তা সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। অন্যের এক ইঞ্চি জমি নিজের দখলে রাখা যাবে না। বরং সীমানা নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে একজন ভালো আমিন/সার্ভেয়ার ডেকে নিজে থেকে ১-২ফুট জায়গা ছেড়ে দেওয়াই উত্তম। রাস্তার জন্য জায়গার দরকার হলে ১-২ফুট ছেড়ে দেওয়া নৈতিক দায়িত্ব। কারণ প্রকৃত পক্ষে সকল কিছুর মালিক আল্লাহ। জায়গা-জমি নিয়ে কখনো লোভ-লালসা, ঝগড়া-বিবাদ করা যাবে না, মারা গেলে আপনার জমি অই সাড়ে তিন হাত ই হবে।
ইসলামে জমির যাকাতের বিধান কী?
ব্যবসার উদ্দেশ্যে জমি ক্রয়-বিক্রয় করলেই কেবল সেই জমির বর্তমান বিক্রয়মূল্য হিসাব করে শতকরা ২.৫% যাকাত দিতে হবে। আর ব্যবসার উদ্দেশ্য না থাকলে সেই জমির কোন যাকাত আদায় করতে হবে না। বরং তা থেকে অর্জিত অর্থ নিছাব পরিমাণ হলে তার শতকরা ২.৫% যাকাত দিতে হবে। [শরহুল মুমতে ’ ৬/১৪২-১৪৩ পৃঃ]
জমি বিনিয়োগের আগে কী কী বিষয় মাথায় রাখলে আপনি কখনো জমি কিনে প্রতারিত/ঠকবেন না?
জমির ইতিহাস জানুন, জমির প্রকৃত মালিক কে? দখলে কে আছে? এই দুইটি ঠিক থাকলে তার নামে নামজারি করা আছে কিনা তা দেখেন। বাস্তবে জমির পরিমাণ দেখেন, জমিতে যাওয়ার ভালো রাস্তা আছে কিনা দেখেন, ভবিষ্যতে আপনার জমির আশেপাশে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ভালো রাস্তাঘাট, মেট্রোসহ ভালো অবকাঠামো গড়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে কিনা দেখেন, জমির বাজার মূল্য যাচাই করুন। এই গুলা ছাড়া একটি জমি কিনার আগে অনেক বিষয় জানার দরকার হয়। যার জন্য আপনাকে অবশ্যই একজন জায়গা-জমি ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিতে হবে। এই বিষয়ে সহায়তার জন্য সব সময় জমি বাজারের অভিজ্ঞ টিম মেম্বাররা আপনাকে সাহায্য করবে। জমি বাজারে পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের সব জমি। জমি বাজারের লিস্টিং করা জমি দেখতে ক্লিক করুন।
# জায়গা-জমি বিক্রি হবে খুব সহজে, জমি বাজারে!