ফ্রি দিলেও এই ১৫ধরণের জায়গা-সম্পত্তি ভুলেও কিনা যাবে না!

ফ্রি দিলেও এই ১৫ধরণের জায়গা-সম্পত্তি ভুলেও কিনা যাবে না!_jomi bazar.com.bd_জমি বাজার

কম দামে জমি পেতে কার না ইচ্ছা করে?
কিন্তু সাবধান! সব জমি কিনলেই আপনি মালিক হবেন — এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।
কিছু জমি আছে যা কিনে ফেঁসে যাওয়ার ঝুঁকি ১০০%! সাথে জেলের ভাতও কাপলে জোটতে পারে। সতর্ক থাকুন!  এমন কিছু জমি আছে যা কখনই ক্রয়-বিক্রয় করা যায় না। আমরা অনেকই এই বিষয়ে না জানার করাণে নিজের টাকা দিয়ে দলিল ক্রয় করলেও জমি/সম্পত্তি ভোগ বা দখলে যেতে পারি না।

এক নজরে এই ধরণের জমির ধরণ গুলা দেখে নিই, তারপর বিস্তারিত আলোচনা করবো।

  • খাস জমি
    • শত্রু/অর্পিত জমিপরিত্যাক্ত
    • বিভিন্ন সংস্থার জমি। যেমন: বন বিভাগ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়।
  • অধিগ্রহণ কৃত জমি
  • পাওয়ার অব অ্যাটর্নি 
  • নাবালকদেরকে নামে থাকা জমি
  • বন্ধকীকৃত জমি
  • ওয়ারিশ আছে এমন জমি
  • কোন আদালতে মামলা আছে এমন জমি
  • অন্য কারো কাছে বায়না হয়েছে এমন
  • যাতায়াতের রাস্তা নেই এমন জমি
  • দখলহীন জমি
  • ওয়াকফ সম্পত্তি
  • দেবোত্তর সম্পত্তি
  • সিকস্তি ও পয়স্তি
  • ভাওয়াল এস্টেট
  • নবাব এস্টেট


খাস জমি কেন ক্রয় করা যাবে না? কয় ধরণের খাসের জমি আছে তাও জেনে নিই

খাস জমি মানে হলো সরকারি মালিকানাধীন জমি, যা ব্যক্তিগতভাবে কেউ কিনতে বা বিক্রি করতে পারে না।
এই জমি সরকার বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহার করে বা নির্দিষ্ট নিয়মে ইজারা দেয়।
কেউ যদি আপনাকে খাস জমি বিক্রি করতে চায়, তাহলে সেটি সম্পূর্ণ অবৈধ হবে। তাই সাবধান না হলে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি আইনি বিপদেও পড়তে পারেন।

খাস জমি কেন ক্রয় করা যাবে না? কয় ধরণের খাসের জমি আছে তাও জেনে নিই_jomi bazar.com.bd_জমি বাজার

খাস জমি বলতে সাধারণত বিভিন্ন প্রকারের সরকারি জমিকে বোঝানো হয়। যেমন:

শক্র সম্পত্তি বা অর্পিত সম্পত্তি ক্রয় করা যাবে কিনা?

শক্র সম্পত্তি বলতে এমন সম্পত্তিকে বোঝায়, যা মূল মালিক দেশত্যাগ করে ভারত বা অন্য দেশে চলে গেছেন এবং সম্পত্তির তদারকি করার কেউ ছিল না।
১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর, বিশেষ করে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময়, অনেক পরিবার বিশেষ করে হিন্দু পরিবার পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) ছেড়ে ভারতে চলে যায়। তাদের ফেলে যাওয়া জমি-জমা, বাড়ি-ঘর পাকিস্তান সরকার(সেনা শাসিত সরকার) ১৯৬৫ সালে জরুরি অধ্যাদেশ জারি করে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়, ১৯৭৪ সালে এর নামকরণ করা হয় অর্পিত সম্পত্তি।আরও তথ্যের জন্য আপনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য ও নির্দেশনাসমূহ পাবেন: ভূমি মন্ত্রণালয় – অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান

পরিত্যক্ত সম্পত্তির মালিকানা স্থানান্তর করা যায় কি?

পরিত্যক্ত সম্পত্তি এবং অর্পিত সম্পত্তি উভয়ই সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন সম্পত্তি হলেও, তাদের উৎপত্তি, আইনি ভিত্তি এবং মালিকদের অবস্থা ভিন্ন। পরিত্যক্ত সম্পত্তি মূলত মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত, যেখানে অর্পিত সম্পত্তি ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয়েছে।

রাস্তা, জলাশয় ও নদীভূমি কি খাসের জমি?

রাস্তা, নদী, খাল-বিলসহ জলাশয়সমূহ সাধারণত সরকারি মালিকানাধীন হয়। এগুলো পরিবেশ সংরক্ষণ, জনসেবা এবং নৌপথ ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত থাকে। এ ধরনের সম্পত্তি ব্যক্তিগত মালিকানায় ক্রয়-বিক্রয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

রিজার্ভ ফরেস্ট বা সংরক্ষিত বনভূমি

বাংলাদেশের রিজার্ভ ফরেস্ট বা সংরক্ষিত বনভূমি মূলত বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে এ ধরনের বনভূমি বেশি দেখা যায়। এই জমিগুলো ব্যক্তিগত মালিকানায় নেওয়া বা কেনা সম্ভব নয়।

বিভিন্ন সংস্থার জমি

সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা সংস্থাকে বিশেষ উদ্দেশ্যে জমি বরাদ্দ দেয়, যেমন বন বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, রেলওয়ে বা সড়ক বিভাগ ইত্যাদি। এ ধরনের জমি সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ব্যক্তিগতভাবে এ জমির মালিকানা ক্রয় বা কেনা না।

খাস জমি চিহ্নিত করার জন্য স্থানীয় সাব-রেজিস্ট্রি অফিস বা রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে ১নং খতিয়ান ও ৮নং রেজিস্ট্রি বই যাচাই করাতে হবে।



অধিগ্রহণ কৃত জায়গা-জমি/সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় বা কেনা বেচা করা যায় না কেন?

সরকার বা কোনো সংস্থা জনস্বার্থে জমি অধিগ্রহণ করলে, সেই জমির মালিকানা একেবারে সরকারের হয়ে যায়। এই জমি ব্যক্তি মালিকানায় কেনা বা বিক্রি করা আইনত অবৈধ। অনেক সময় পুরনো মালিকেরা প্রতারণা করে এসব জমি বিক্রি করতে চায়, যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের আইনি ঝামেলায় ফেলতে পারে।
ভবিষ্যতে অধিগ্রহণ হতে পারে এমন ঝুঁকিপূর্ণ জমি ক্রয় থেকেও অবশ্যই বিরত থাকা উচিত।




পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের মধ্যমে জায়গা-জমি/সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় বা কেনা বেচা করা যায় কিনা?

মূলত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের পাওয়ারের মধ্যে সম্পত্তি ক্রয় করা যায়, এটি অইনগত বৈধ। তবে অনেক সময় পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের পাওয়ার বা কার্যকারিতা থাকে না, এইসময় সম্পত্তির সাব-কাবলা করলে তার বাতিল হয়ে যাবে!

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের মধ্যমে জায়গা-জমি/সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় বা কেনা বেচা করা যায় কিনা? _jomi bazar.com.bd_জমি বাজার

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (Power of Attorney) দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় একটি সাধারণ প্রক্রিয়া হলেও, এটি সঠিকভাবে না বুঝে বা যাচাই না করে সম্পন্ন করলে আইনি জটিলতা ও প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:​


কখন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি কেনা যায়?

স্পষ্ট ক্ষমতা প্রদান: দলিলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে যে, পাওয়ার গ্রহীতা (Agent) সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারবেন।​

নিবন্ধন: দলিলটি যথাযথভাবে রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধিত হতে হবে।​

জীবিত ও মানসিকভাবে সক্ষম: দাতা (Principal) জীবিত এবং মানসিকভাবে সক্ষম থাকতে হবে।​

প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অনুমোদন: বিদেশে অবস্থানরত দাতার ক্ষেত্রে, দলিলটি সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ দূতাবাসে নোটারাইজ ও অ্যাটেস্টেড হতে হবে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সত্যায়িত হতে হবে ।​


কখন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি কেনা যায় না?

নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি কেনা উচিত নয়:

অস্পষ্ট বা সীমিত ক্ষমতা: দলিলে যদি স্পষ্টভাবে সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষমতা উল্লেখ না থাকে।​

নিবন্ধনহীন দলিল: যদি দলিলটি রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধিত না হয়।​

দাতা বা গ্রহীতার মৃত্যু: যদি দাতা বা গ্রহীতা মারা যান, তবে দলিলটি বাতিল হয়ে যায়।​

দলিল বাতিল: যদি দাতা দলিলটি বাতিল করেন এবং তা রেজিস্ট্রি অফিসে অবহিত করেন।


পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের মাধ্যমে প্রতারকরা কীভাবে প্রতারণা করে?

নকল দলিল: ভুয়া বা নকল পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল তৈরি করে।​

মৃত দাতার দলিল ব্যবহার: মৃত ব্যক্তির নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল ব্যবহার করে।​

বাতিলকৃত দলিল: বাতিলকৃত দলিল ব্যবহার করে সম্পত্তি বিক্রয় করে।​

সীমিত ক্ষমতা: দলিলে সীমিত ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সম্পত্তি বিক্রয় করে।


পরামর্শ

  • পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি ক্রয়ের আগে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিন।​
  • দলিলের সত্যতা ও বৈধতা যাচাই করুন।​
  • রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের নিবন্ধন নিশ্চিত করুন।​
  • দাতা ও গ্রহীতার পরিচয় ও অবস্থা যাচাই করুন।​
  • দলিলে সম্পত্তি বিক্রয়ের স্পষ্ট ক্ষমতা উল্লেখ আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।​

সতর্কতা অবলম্বন করে এবং সঠিক তথ্য যাচাই করে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি ক্রয় করলে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা এড়ানো সম্ভব।



নাবালকদেরকে নামে থাকা জায়গা-জমি/সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় বা কেনা বেচা করা যায় না কেন?

​নাবালকের (১৮ বছরের কম বয়সী) নামে থাকা জমি বা সম্পত্তি সরাসরি কেনা আইনত বৈধ নয়। কারণ, নাবালক নিজে কোনো চুক্তি সম্পাদন করতে পারে না, এবং তার সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। তবে, নাবালকের স্বাভাবিক অভিভাবক (যেমন পিতা) যদি নাবালকের কল্যাণে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে চান, তবে আদালতের অনুমতি ছাড়া তা করা উচিত নয়। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে ভবিষ্যতে সেই হস্তান্তর বাতিল হবে। ​

সতর্কতা:

  • আদালতের অনুমতি ছাড়া নাবালকের সম্পত্তি ক্রয় করা থেকে বিরত থাকুন।​
  • সম্পত্তি ক্রয়ের আগে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিন।​
  • সম্পত্তির দলিল, খতিয়ান এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র যাচাই করুন।


বন্ধকীকৃত জায়গা-জমি/সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় বা কেনা বেচা করা যায় না কেন?

​বন্ধকীকৃত জমি বা সম্পত্তি কেনা ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ বন্ধকদাতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান (যেমন ব্যাংক) সেই সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করতে পারে। ফলে, ক্রেতা ভবিষ্যতে মালিকানা হারানোর ঝুঁকিতে পড়েন। এছাড়া, বন্ধক সম্পর্কিত তথ্য গোপন থাকলে, আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই, জমি কেনার আগে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে খতিয়ান ও দলিল যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া জরুরি যে, সম্পত্তিটি বন্ধকমুক্ত।​




ওয়ারিশ আছে এমন জমি কিনার আগে সর্তক থাকুন

ওয়ারিশ আছে এমন জমি কিনার আগে সর্তক থাকুন_jomi bazar.com.bd_জমি বাজার

ওয়ারিশ সম্পত্তি কেনার সময় যে ঝুঁকিগুলো থাকে:

অগ্রক্রয়ের মামলা (Pre-emption): যদি কোনো ওয়ারিশ তার অংশ বিক্রি করে এবং অন্য ওয়ারিশরা তা জানতে না পারে, তাহলে তারা অগ্রক্রয়ের মামলা করতে পারে, যা ক্রেতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।​

ওয়ারিশদের প্রকৃত সংখ্যা গোপন: অনেক সময় বিক্রেতা ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু ওয়ারিশের নাম গোপন করে, ফলে ভবিষ্যতে বাদপড়া ওয়ারিশরা তাদের অংশ দাবি করতে পারে।​

জাল ওয়ারিশ সনদ: কিছু প্রতারক জাল ওয়ারিশ সনদ তৈরি করে জমি বিক্রি করে, যা পরবর্তীতে আইনি জটিলতা সৃষ্টি করে।​

ভাগের অতিরিক্ত জমি বিক্রি: কিছু ওয়ারিশ তাদের প্রাপ্য অংশের চেয়ে বেশি জমি বিক্রি করে, যা অন্য ওয়ারিশদের অধিকার ক্ষুণ্ন করে।​

মৌখিক বণ্টন: অনেক সময় পারিবারিকভাবে মৌখিকভাবে জমি ভাগ করা হয়, কিন্তু তা লিখিত না থাকায় ভবিষ্যতে বিরোধের সৃষ্টি হয়।​

বন্টননামা দলিলের অভাব: বণ্টননামা দলিল না থাকলে, জমির মালিকানা নিয়ে ভবিষ্যতে বিরোধ হতে পারে।​

দখল সংক্রান্ত সমস্যা: যদি জমির দখল নিয়ে বিরোধ থাকে, তাহলে ক্রেতা দখল নিতে সমস্যায় পড়তে পারেন।​

ওয়ারিশান জমি/সম্পত্তি কেনার আগে একজন অভিজ্ঞ আমিন, সার্ভেয়ার, আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।​



আদালতে মামলা আছে এমন জায়গা-জমি/সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় বা কেনা বেচা করা যায় না কেন?

​কোনো জমি বা সম্পত্তি যদি আদালতে মামলা-মোকদ্দমার আওতাধীন থাকে, তবে তা কেনা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, মামলার রায় যদি বিক্রেতার বিপক্ষে যায়, তাহলে ক্রেতার মালিকানা বাতিল হয়ে যেতে পারে। এছাড়া, চলমান মামলার কারণে সম্পত্তির হস্তান্তর আদালত স্থগিত করতে পারে, ফলে ক্রেতা দখল বা নামজারি করতে পারবেন না। তাই, জমি কেনার আগে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিস ও আদালতে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি যে, সম্পত্তিটি মামলা-মোকদ্দমামুক্ত।



অন্য কারো কাছে বায়না/রেজিস্ট্রি  হয়েছে জায়গা-জমি/সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় বা কেনা বেচা করা যায় কিনা?

অন্য কারো কাছে বায়না বা রেজিস্ট্রি হয়ে যাওয়া জমি কেনা নিরাপদ নয়, কারণ এটি বিক্রির আগে অন্য ব্যক্তি জমির মালিকানা দাবি করতে পারে, যা আইনি জটিলতার কারণ হতে পারে। যদি জমি বায়না বা রেজিস্ট্রির পর বাতিল হয়ে যায়, তবে এটি ক্রয়ের জন্য কোনো বাধা সৃষ্টি করে না। তবে, বায়না দলিল বাতিল হয়েছে কিনা তা নিশ্চিতভাবে যাচাই করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে কোনো আইনগত সমস্যা না হয়।



যাতায়াতের রাস্তা নেই এমন জায়গা-জমি/সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় বা কেনা বেচা করা উচিত কিনা?

​যাতায়াতের রাস্তা না থাকা জমি (অবরুদ্ধ জমি) কেনা থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এমন জমিতে প্রবেশ বা বাহির হওয়ার কোনো সরাসরি পথ থাকে না। ফলে জমিটি ব্যবহার, উন্নয়ন বা ভবিষ্যতে বিক্রয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া, আইনি জটিলতা ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধের সম্ভাবনা থাকে। জমি কেনার আগে মৌজা ম্যাপ ও সরেজমিনে যাচাই করে নিশ্চিত হতে হবে যে, জমিটিতে বৈধ যাতায়াতের রাস্তা রয়েছে ।​



দখলহীন জায়গা-জমি/সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় বা কেনা বেচা করা উচিত কিনা?

​দখলহীন জমি বা সম্পত্তি কেনা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এর প্রকৃত মালিকানা ও দখল নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। যদি জমিটি অন্য কেউ দখল করে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে সেই দখলদার আইনি দাবি করতে পারে, যা ক্রেতার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, দখলহীন জমি প্রায়ই জাল দলিল বা প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই জমি কেনার আগে নিশ্চিত হওয়া উচিত যে, বিক্রেতা প্রকৃতপক্ষে জমির দখলে আছেন এবং জমিটি দখলমুক্ত। এটি নিশ্চিত করতে স্থানীয় ভূমি অফিসে খতিয়ান ও দাগ নম্বর যাচাই করা এবং সরেজমিনে পরিদর্শন করা জরুরি।​

ফ্রি দিলেও এই ১৫ধরণের জায়গা-সম্পত্তি ভুলেও কিনা যাবে না!_jomi bazar.com.bd_জমি বাজার_1

ওয়াকফ সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় বা কেনা বেচা করা উচিত কিনা?

ওয়াকফ সম্পত্তি হলো এমন একটি সম্পত্তি যা কোনো মুসলমান ব্যক্তি ধর্মীয়, দাতব্য বা জনকল্যাণমূলক উদ্দেশ্যে স্থায়ীভাবে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করেন। এই সম্পত্তির মালিকানা আর ব্যক্তিগত থাকে না; এটি সমাজের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়। ওয়াকফ সম্পত্তির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকেন “মুতাওয়াল্লী” নামে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি, যিনি ওয়াকফকারীর নিযুক্ত হন এবং সম্পত্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করেন।

বাংলাদেশে ওয়াকফ সম্পত্তির সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য “ওয়াকফ প্রশাসন অধিদপ্তর” রয়েছে। ওয়াকফ সম্পত্তি সাধারণত বিক্রয়যোগ্য নয়। তবে, কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে, যেমন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য, সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবহার করা যেতে পারে । এই প্রক্রিয়ায় বিশেষ কমিটির সুপারিশ এবং সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে, অনুমতি ছাড়া ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর অবৈধ এবং অকার্যকর বলে গণ্য হয় ।

সুতরাং, ওয়াকফ সম্পত্তি কেনার আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন এবং প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত। এছাড়া, জমি কেনার আগে সংশ্লিষ্ট খতিয়ান ও দলিলপত্র ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে, এটি ওয়াকফ সম্পত্তি নয় বা যথাযথ অনুমোদন রয়েছে।

ওয়াকফ সম্পত্তি কেনা থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এটি ধর্মীয় ও দাতব্য উদ্দেশ্যে স্থায়ীভাবে আল্লাহর নামে উৎসর্গিত হয়। একবার ওয়াকফ ঘোষিত হলে, সেই সম্পত্তি আর ব্যক্তিগত মালিকানায় ফিরে আসে না এবং এটি বিক্রয়, হস্তান্তর বা উত্তরাধিকারসূত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়ন বা জনকল্যাণমূলক উদ্দেশ্যে ওয়াকফ প্রশাসনের অনুমোদন সাপেক্ষে হস্তান্তর সম্ভব, তবে এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং কঠোর নিয়মাবলির অধীন। অতএব, ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা ও প্রতারণার ঝুঁকি এড়াতে ওয়াকফ সম্পত্তি কেনা থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।



দেবোত্তর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় বা কেনা বেচা করা উচিত কিনা?

​দেবোত্তর সম্পত্তি হলো হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী দেবতা বা মন্দিরের সেবায় উৎসর্গকৃত স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি। এই সম্পত্তি একবার উৎসর্গিত হলে তা চিরস্থায়ীভাবে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় এবং ব্যক্তিগত মালিকানায় ফিরে আসে না। দেবোত্তর সম্পত্তির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকেন ‘সেবায়েত’ নামক ব্যক্তি, যিনি মন্দির বা দেবতার সেবা ও সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা করেন।​

বাংলাদেশে দেবোত্তর সম্পত্তির হস্তান্তর বা বিক্রয় সাধারণত নিষিদ্ধ। তবে, কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে, যেমন ধর্মীয় কার্যক্রমের উন্নয়ন বা জনকল্যাণমূলক উদ্দেশ্যে, আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে এই সম্পত্তি হস্তান্তর করা যেতে পারে । এই প্রক্রিয়ায় সেবায়েতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, তবে আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো হস্তান্তর বৈধ নয়।​

সুতরাং, দেবোত্তর সম্পত্তি কেনার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে, এটি হস্তান্তরের জন্য আদালতের অনুমোদন রয়েছে কিনা। অনুমতি ছাড়া এমন সম্পত্তি কেনা আইনি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে এবং ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে।



সিকস্তি ও পয়স্তি সম্পত্তি কী?

সিকস্তি ও পয়স্তি জমি বাংলাদেশের নদীপ্রবণ এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমি বিষয়ক ধারণা। এই জমিগুলোর মালিকানা ও ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত আইনি দিকগুলো জটিল এবং স্পষ্ট না হওয়ায়, এ ধরনের জমি কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।​

সিকস্তি: নদীভাঙনের ফলে যখন কোনো জমি পানিতে বিলীন হয়ে যায়, তখন তাকে সিকস্তি জমি বলা হয়।​ আপনার জমির সাথে সিকস্তি হলে, সেই সিকস্তি অংশের খাজনা মওকুফের আবেদন করবেন  এসিল্যান্ড  বরাবর। এবং মওকুফের রশিদ ও অন্য কাগজপত্র সংগ্রহে রাখবেন, তাহলে ভবিষ্যতের চর জাগলে আপনি এবং আপনার ওয়ারিশগণ সিকস্তি হাওয়া জমিটি দাবি করতে পারবেন।

পয়স্তি: নদীর গর্ভ থেকে পলি জমে নতুন চর সৃষ্টি হলে তাকে পয়স্তি জমি বলা হয়। এই জমি যদি পূর্বের সিকস্তি জমির স্থানে গঠিত অথবা ১কিলোমিটার সীমার মধ্যে হয়, তবে পূর্ববর্তী মালিক বা তার উত্তরাধিকারগণ সেই জমির মালিকানা দাবি করতে পারেন ।​

সিকস্তি ও পয়স্তি জমির মালিকানা সংক্রান্ত আইনি জটিলতা, দখল সংক্রান্ত সমস্যা এবং ভবিষ্যতে নদীভাঙনের ঝুঁকি থাকার কারণে, এ ধরনের জমি কেনা থেকে বিরত থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। যদি কেউ এই জমি কিনতে আগ্রহী হন, তবে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস থেকে জমির বর্তমান অবস্থা, মালিকানা এবং আইনি বৈধতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।



ভাওয়াল এস্টেট কী?

​ভাওয়াল এস্টেট ছিল পূর্ব বাংলার অন্যতম বৃহৎ জমিদারি, যার পরিধি ও আয় অনুযায়ী এটি ঢাকার নবাব এস্টেটের পরেই দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিল। এই এস্টেটের জমিগুলো মূলত ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় বিস্তৃত ছিল। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এস্টেটের জমিগুলোর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় জটিলতা দেখা দেয়। ১৯০৪ সালে, এস্টেটের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে ব্রিটিশ সরকার এটি কোর্ট অব ওয়ার্ডসের অধীনে নিয়ে নেয়। বর্তমানে, এস্টেটের অনেক জমি খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তবে অনেক জমি এখনো ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক দখলে রয়েছে ।

ভাওয়াল এস্টেটের জমি কেনা থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এই জমিগুলোর মালিকানা ও দখল সংক্রান্ত বিষয়গুলো অত্যন্ত জটিল। অনেক জমি এখনো খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায়, ভবিষ্যতে সরকার এসব জমি পুনরুদ্ধার করতে পারে, যা ক্রেতার জন্য আইনি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, এস্টেটের জমিগুলো নিয়ে বহু মামলা-মোকদ্দমা চলমান রয়েছে, যা ক্রয়ের পর দখল ও মালিকানা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, ভাওয়াল এস্টেটের জমি কেনার আগে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস থেকে জমির বর্তমান অবস্থা, মালিকানা ও আইনি বৈধতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।



নবাব এস্টেট কী?

​নবাব এস্টেট ছিল ব্রিটিশ বাংলার অন্যতম বৃহৎ মুসলিম জমিদারি, যার প্রতিষ্ঠাতা খাজা হাফিজুল্লাহ এবং তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র খাজা আলিমুল্লাহ। এই এস্টেটের জমিদারি পরিধি বরিশাল, ত্রিপুরা, ময়মনসিংহ, ঢাকা, রাজশাহী এবং পাবনা জেলায় বিস্তৃত ছিল। পরবর্তীতে খাজা আবদুল গণি এবং তাঁর পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ এই এস্টেটের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ।​

নবাব এস্টেটের জমি কেনা থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এই জমিগুলোর মালিকানা ও দখল সংক্রান্ত বিষয়গুলো অত্যন্ত জটিল। অনেক জমি এখনো খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায়, ভবিষ্যতে সরকার এসব জমি পুনরুদ্ধার করতে পারে, যা ক্রেতার জন্য আইনি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, এস্টেটের জমিগুলো নিয়ে বহু মামলা-মোকদ্দমা চলমান রয়েছে, যা ক্রয়ের পর দখল ও মালিকানা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, নবাব এস্টেটের জমি কেনার আগে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস থেকে জমির বর্তমান অবস্থা, মালিকানা ও আইনি বৈধতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।



জমি কেনা জীবনের অন্যতম বড় বিনিয়োগ। একবার ভুল করলে, শুধরে নেওয়া প্রায় অসম্ভব। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ জমি কিনে প্রতারিত হচ্ছেন — কেউ নিজের কষ্টের টাকা দিয়ে ঝগড়া, মামলা ও বছরের পর বছর চলা আইনি জটিলতা কিনে ফেলেন। তাই জমি বা সম্পত্তি কেনার আগে খুব সতর্ক থাকা জরুরি। উপরের উল্লেখিত জমির ধরণগুলো যাচাই করুন এবং জমির ইতিহাস, খতিয়ান, দখল ও আইনি অবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করুন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ আমিন, সার্ভেয়ার ও আইনজীবীর পরামর্শ নিন। কোটি টাকার সম্পত্তি কেনার আগে সামান্য পরামর্শ ফি দিয়ে নিশ্চিত করুন শান্তিময় ভবিষ্যৎ। মনে রাখুন — একটু সচেতনতা আপনাকে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।

End of the blog!
Feel free to leave a comment and share with your friends!

Want to explore more?
Click the Next or Previous buttons!

Table of Contents

ফ্রি বিজ্ঞাপন দিন

আপনার জমি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিন এবং হাজারো ক্রেতার কাছে সহজেই পৌঁছান।

জায়গা ও জমি বিক্রি হবে খুব সহজে, জমি বাজারে!

Featured Properties:

Share this