জমি কিনার আগে যে সকল বিষয় সমূহ মাথায় রাখতে হবে:
জমি ক্রয় করার আগে দলিল সহ বিস্তারিত তল্লাশি করুন
জমি কেনা অন্য কোন সাধারণ জিনিস কেনার মত নয়, আপনি বাজারে গেলেন বস্তা করে নিয়ে চলে এলেন, এমন নয় কিন্তু। জমি ক্রয়ের হচ্ছে মালিকানা ক্রয়। তাই আপনাকে দেখতে হবে যে ব্যক্তি জমি বিক্রি করতে চাচ্ছেন তিনি প্রকৃত মালিক কিনা।
জমির প্রকৃত মালিক চেনার জন্য মূল দলিলের সাথে এনআইডির নাম ও নম্বর মিলিয়ে দেখতে হবে। খতিয়ানে উক্ত ব্যক্তির নাম আছে কিনা তাও দেখতে হবে। ভূমি করের অনলাইন রশিদের কিউআর কোড স্কেন করেও দেখতে পারবেন জমির মালিকের এনআইডির তথ্য দেখা যাচ্ছে কিনা।
সতর্কতা: তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে এসে সকল কিছুর নকল বানানো সম্ভব হচ্ছে। এই কারণে দলিলটি জাল কিনা তা একজন এক্সপার্ট থেকে তা যাচাই করে নিন।
দলিল, খতিয়ান, মৌজা ম্যাপ ও দখলে সম পরিমাণ জায়গা আছে কিনা তা যাচাই করে নিন
অনেক জায়গার দলিল, খতিয়ান, মৌজা ম্যাপ ও দখলে জমি পরিমাণে ভিন্নতা দেখা যায়।
যেমন: আপনি একটি জায়গা কিনতে চাচ্ছেন যার পরিমাণ ৪০শতক। দলিল ও খতিয়ানে ৪০শতকের কথা উল্লেখ থাকলেও মৌজা ম্যাপে ৩৫শতক জায়গা রয়েছে আর দখলে তার থেকেও কম রয়েছে।
তাই সবসময় জায়গার কিনার আগে একজন দক্ষ আমিনের সাথে যোগাযোগ করে সব কিছু বুঝে নিবেন।
জমি বাজারে দক্ষ আমিনদের তালিকা দেখতে ক্লিক করুন…
জমির সাইজ
জমি কিনার সময় জমির আকৃতি যাতে চার কোণ হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিন কোণের জমি হলে কোন স্থাপনা নিমার্ণের সময় উক্ত জমিটির বেশ কিছু অংশ যথাযথ ব্যবহার হবে না। তাই যত সম্ভব চার কোণে জায়গা ক্রয়ের চেষ্টা করুন।

রাস্তাঘাটের অবকাঠামো এবং যাতায়াত সুযোগ সুবিধা
ক্রয় ইচ্ছুক জায়গাটির পাশে যাতে যাতায়াতের রাস্তা থাকে সেই দিকে অব্যশই খেয়াল রাখতে হবে। রাস্তা ছাড়া জায়গার দুই টাকা দামও থাকে না।
মেইন রোডের পাশের জায়গা হলে জায়গার দাম সব সময় উর্দ্ধমুখী থাকে। জায়গার অবস্থান একটু ভিতরের দিকে হলে জায়গার দাম তেমন বাড়ে না।

বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির ব্যবস্থা কেমন তা নিশ্চিত হয়ে নিন
একটি জায়গাতে ভবিষ্যতে কোন কিছু নিমার্ণ করতে গেলেই বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির দরকার হয়। তাই কোন জায়গা কিনার আগে আশেপাশের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইন আছে তা সতর্কতার সাথে যাচাই করে নিন।

দাম যাচাই করা
কোন জায়গা ক্রয়ের আগে সেই জায়গার বাজার মূল্য যাচাই করা অব্যশক। জায়গার সরকারী একটি মৌজা রেইট থাকলেও বাস্তবে তার থেকে অনেক বেশি দামে জায়গা-জমি ক্রয় বিক্র হয়। আর এরই সুযোগে কিছু অসাধু লোক জায়গার দাম অতিরিক্ত উপস্থাপন করে। তাই জায়গা কিনার আগে সেই এলাকায় গতকয়েক মাস/বছরে কেমন দামে জায়গায়-জমি ক্রয় বিক্রয় হয় তা জেনে নিতে হবে।
দক্ষ আমিনের সাহায্য নিয়ে জায়গার পরিমাণ বুঝে নিন
জায়গার দলিল, খতিয়ান, মৌজা ম্যাপ ও দখলে জায়গার পরিমাণে ভিন্নতা থাকতে পারে। তাই দক্ষ আমিনের সাহায্যে সব কিছু মেপে দেখতে হবে। আর বেশিভাগ সময় জায়গার দখলে কম পরিমাণ জায়গা থাকে তাই ভালোভাবে জায়গা পরিমাণ করে জায়গার দাম নির্ধারণ করে নেওয়া ভালো।
জমিতে আগে কোন ঝামেলা আছে কিনা তা ভালোভাবে জেনে নিন
জায়গাতে যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে তা জমির মালিক আপনাকে কখনো বলবে না। তাই আপনাকে সতর্কতার সাথে জায়গাটির অন্য কোন মালিক আছে কিনা বা অন্য কোন সমস্যা আছে কিনা তা জেনে নিতে হবে।
সব ঠিক থাকলে সব জায়গাতে সীমানা নিয়ে বিরোধ লেগেই থাকেই। তাই জায়গার কিনার আগে আশেপাশের জমির মালিকদের ডেকে জমির মাপ দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে নেওয়ার উচিত।
জমি কিনার পর যে সকল বিষয় সমূহ মাথায় রাখতে হবে:
জমি ক্রয়ের পর সীমানা দেওয়া
জমি ক্রয়ের সাথে সাথে ক্রয়কৃত জায়গাটিতে সীমানা প্রাচীর/বান্ডারি নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট কম হলে ২-৩ফুট ইটের বান্ডারি দেওয়া যেতে পারে। আর বাজেট একবারে কম হলে গুরুত্বপূর্ণ কোণে একটু মোটা করে পিলার দেওয়া যেতে পারে যাতে অসাধু মানুষ সহজে পিলারটি তুলতে না পারে।


নিয়মিত জায়গা পরিদর্শন করা
জায়গা কিনে দীঘদিন না গেলে কিছু অসাধু মানুষ আপনার জায়গার পিলার তুলে ভিতরের দিকে বসিয়ে দেয়। আবার কোন গাছ-পালা বা স্থাপনা থাকলে তা ক্ষতি করার চেষ্টায় থাকে। তাই হাতে সময় না থাকলেও মাসে অন্তত একবার ক্রয়কৃত জায়গাটি পরিদর্শন করা উচিত।